Logo

রাজনীতি    >>   জামায়াতে ইসলামী এর ২২ দফা প্রস্তাব ইসিকে

জামায়াতে ইসলামী এর ২২ দফা প্রস্তাব ইসিকে

জামায়াতে ইসলামী এর ২২ দফা প্রস্তাব ইসিকে

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সম্প্রতি সংসদীয় আসনভিত্তিক নির্বাচনের পরিবর্তে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (Proportional Representation) পদ্ধতি চালু করার জন্য নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এই প্রস্তাবনায় ২২টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে নির্বাচন প্রক্রিয়ার একটি ব্যাপক সংস্কারের আহ্বান জানানো হয়েছে। দলটির প্রস্তাবনায় নির্বাচন কমিশনকে একটি নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং অবাধ নির্বাচনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে।

প্রস্তাবনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি দাবি হলো নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করা, যা জামায়াতের মতে নির্বাচনের ধারাকে আরও স্বচ্ছ এবং গ্রহণযোগ্য করবে। এই ব্যবস্থার অধীনে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের আস্থায় অবাধ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হবে, এবং নির্বাচন কমিশন হবে সরকারের প্রভাবমুক্ত।

এছাড়া, জামায়াতের প্রস্তাবনায় ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) পদ্ধতি বাতিল করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, কারণ তারা মনে করেন, এটি ভোটের গোপনীয়তা ও স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে যথাযথভাবে কাজ করছে না। ভোটার তালিকা নিয়ে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব হলো মৃত ও ভুয়া ভোটারদের বাদ দিয়ে হালনাগাদ, নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরি করা।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব হল জাতীয় সংসদে অংশীজনদের সংখ্যাধিক্য নিশ্চিত করতে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি চালু করা। এর মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভোটের ভিত্তিতে সংসদে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে, যাতে জনগণের প্রকৃত ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়। জামায়াত আরও একটি প্রস্তাব দিয়েছে যে, দুবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হতে পারবেন না, যা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেতৃত্বের দীর্ঘমেয়াদী আধিপত্য নিয়ন্ত্রণ করবে।

এছাড়া, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়ন ও দলীয় প্রতীক ব্যবহারের পদ্ধতি বাতিল করার প্রস্তাবও রয়েছে, যার মাধ্যমে স্থানীয় ভোটাররা সরাসরি প্রার্থী নির্বাচন করতে পারবেন। জামায়াত আরও বলেছে যে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থাকা কোনো ব্যক্তিকে তার চাকরি বা পদ ত্যাগ করার পর তিন বছরের মধ্যে জাতীয় সংসদ বা স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ না দেওয়া উচিত।

এটি ছাড়া, জামায়াত প্রস্তাব দিয়েছে যে, নির্বাচনকালীন সময়ে সরকারকে নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখার ব্যবস্থা করা হোক, যাতে কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব না হয়। নির্বাচন কমিশনকে আরও ক্ষমতা দেওয়া হবে যাতে তারা নির্বাচনী ফলাফল বাতিল বা স্থগিত করতে পারে, এবং ভোট গণনা, ভোট গ্রহণের সময় পর্যবেক্ষণ ও প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করার মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এমনকি, জামায়াতের ২২ দফা প্রস্তাবে নির্বাচন কমিশনকে এভাবে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যে, তারা নির্বাচনের কোনো অনিয়ম বা জালিয়াতির অভিযোগের ভিত্তিতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। নির্বাচনী প্রক্রিয়া সুষ্ঠু করার জন্য নিরপেক্ষ সাংবাদিক এবং দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে।

এর পাশাপাশি, জামায়াতের প্রস্তাবনায় নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি নতুন বিধি দাবি করা হয়েছে, যাতে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মনোনয়ন কেন্দ্রীয়ভাবে না হয়ে, ভোটারের মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়। এটি দলীয় স্বার্থে প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ করবে এবং দলীয় নেতাদের ব্যক্তিগত ইচ্ছার বাইরে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাবে।